
Table of Contents
Toggleপরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B কী ?
পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B হল এমন একটি ফর্ম যা কোন আয়বর্ষের শেষ তারিখে বা শেষদিনে (অর্থাৎ কোন সালের ৩০ জুন তারিখে) একজন স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার কি কি পরিসম্পদ ও দায় আছে সেই সম্পর্কিত আর্থিক অবস্থার একটি তালিকাস্বরূপ। পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B যা Assets and Liability Statement নামেও পরিচিত।
পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী কোন করদাতার সম্পদ ও দায়ের এমন একটি বিস্তারিত বিবরণী যা আয়কর রিটার্নের সহিত জমা দিতে হয়। এই বিবরণী আয়কর রিটার্নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় যা কর কর্তৃপক্ষকে একজন ব্যক্তির সঠিক করদায় নির্ধারণে সহায়তা করে থাকে। পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণীতে করদাতার মালিকানাধীন সকল সম্পদ যেমন ভূমি, দালানকোঠা, জমি, অ্যাপার্টমেন্ট, অন্যান্য বিনিয়োগ এবং নগদ অর্থ ইত্যাদির পরিমাণ ও মূল্য বিস্তারিতভাবে উল্লেখ থাকে। এছাড়াও এই বিবরণীতে করদাতার সকল দায়সমূহ যেমন ঋণ, ধার, দেনা ইত্যাদি দায়গুলোও উল্লেখ থাকে।
একজন করদাতার সম্পদ ও দায়ের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে কর কর্তৃপক্ষ করদাতার আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে যা কর কর্তৃপক্ষকে সঠিকভাবে করদায় নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। কিছু কিছু দেশে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণীকে “wealth statement” নামেও ডাকা হয়।
কখন পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B জমা দিতে হয়?
পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B আয়কর রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হয়। এখানে উল্লেখ্য যে আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা ২(২৩) অনুযায়ী আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা নির্ভর করে করদাতা কি প্রথমবারের মতো তার আয়কর রিটার্ন জমা দিতেছেন নাকি তার উপর।
- পুরাতন করদাতা:- পূর্ববর্তী বছরগুলিতে যেই করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন তিনি বা তারা পুরাতন করদাতা হিসাবে বিবেচিত হবেন। পুরাতন করদাতাদের জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ হল ৩০ নভেম্বর। যেহেতু পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B আয়কর রিটার্নের সহিত জমা দিতে হয় সেহেতু পুরাতন করদাতাদের ক্ষেত্রে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B ৩০ নভেম্বর এর মধ্যে জমা দিতে হবে।
- নতুন করদাতা:- যে সকল করদাতা ইতিপূর্বে কখনো আয়কর রিটার্ন জমা দেননি তাদেরকে নতুন করদাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নতুন করদাতাদের জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ হলো পরবর্তী বছরের ৩০ জুন। সুতরাং নতুন করদাতাদেরকে পরবর্তী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B জমা দিতে হবে।
পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী কারা জমা দেবে?
আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা ১৬৭ অনুযায়ী নিম্নলিখিত ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাকে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B জমা দিতে হবে।
(ক) করদাতার মোট পরিসম্পদের পরিমাণ যদি ৫০ লক্ষ টাকার বেশি হয়
যদি কোন অর্থবছরের শেষ তারিখে বা শেষদিনে (অর্থাৎ কোন সালের ৩০ জুন তারিখে) একজন স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার মোট পরিসম্পদের পরিমাণ যদি ৫০ লক্ষ টাকার বেশি হয় তবে ঐ করদাতাকে আবশ্যিকভাবে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে মূলত আয়বর্ষের শেষ তারিখে ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকার অধিক মোট সম্পত্তির মালিক হলে কোন স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাকে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল করতে হবে।
উদাহরণ ১
৩০ জুন ২০২৩ তারিখে মি. রহিমের নিম্নলিখিত পরিসম্পদ ছিল:
পরিসম্পদ | ৩০ জুন ২০২৩ তারিখে মূল্য |
বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র | ১,০০০,০০০ |
ডিপিএস (প্রাইম ব্যাংক) | ৫০,০০০ |
এফডিআর (ব্র্যাক ব্যাংক) | ২০০,০০০ |
ফানিচার এবং ফিক্সচার | ৭৮০,০০০ |
ব্যাংক ব্যালেন্স: | |
ঢাকা ব্যাংক | ১২৩,৪৫০ |
ডাচ বাংলা ব্যাংক | ৪৪৬,৮০০ |
এবি ব্যাংক | ৮৭,৩০০ |
হাতে নগদ | ৩৫২,০০০ |
প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যালেন্স | ২২০,৩৫২ |
মোট | ৩,২৫৯,৯০২ |
০১ জুলাই ২০২৩ থেকে ৩০ জুন ২০২৪ এর মধ্যে মি. রহিম ৫০০,০০০ টাকার একটি সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন। এছাড়াও তিনি প্রতি মাসে ১০,০০০ টাকা করে ডিপিএস কিস্তি পরিশোধ করেছেন। ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে তার নগদ, ব্যাংক এবং অন্যান্য সম্পদের ব্যালান্স ছিল নিম্নরূপ:
পরিসম্পদ | পরিমাণ |
ব্যাংক ব্যালেন্স: | |
ঢাকা ব্যাংক | ১১৩,০৫০ |
ডাচ বাংলা ব্যাংক | ৩৪২,৮০০ |
এবি ব্যাংক | ১২৭,৩০০ |
হাতে নগদ | ৫০২,০০০ |
প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যালেন্স | ৬২০,৩৫২ |
সমাধান ১:
উপরে বর্ণিত পরিস্থিতিতে, ২০২৩-২০২৪ করবর্ষে মি. রহিমের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪০ লক্ষ টাকার নিচে থাকার কারণে তাকে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B জমা দিতে হবে না বা জমা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। এখানে উল্লেখ্য যে, ২০২৩-২০২৪ করবর্ষের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির মোট সম্পদের মূল্য যদি ৪০ লক্ষ টাকা (যা এখন ৫০ লক্ষ) অতিক্রম করে, তাহলে ঐ ব্যক্তির জন্য পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B জমা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।
তবে, পরবর্তী করবর্ষে ২০২৪-২০২৫ এ পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়, যেখানে মি. রহিমের সম্পদের মূল্য ৫০ লক্ষ টাকার বেশি (৬৮.৫৫ লক্ষ টাকা) হয়। যার ফলে তাকে ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হবে। এই করবর্ষে মি. রহিম পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল করতে বাধ্য কারণ তার সম্পদের মূল্য ৫০ লক্ষ টাকার বেশি হয়েছে।
(খ) করদাতা যদি ব্যক্তিগত মোটরযানের মালিক হন
যদি একজন ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতা আয়বর্ষের যেকোনো সময় একটি মোটরযানের মালিকও হন তবে তাকে আবশ্যিকভাবে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B জমা দিতে হবে। এটি উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে এই শর্তটি নির্দিষ্ট অর্থবছরে ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতা করযোগ্য আয় হয়েছে কিনা তার ওপর নির্ভরশীল নয়। এছাড়াও পূর্বে উল্লেখিত ৫০ লক্ষ টাকার পরিসম্পদের শর্তও এইখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতার কোন মোটরগাড়ি থাকলেই তাকে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল করতে হবে।
উদাহরণ ২:
মিস. তানিয়া চৌধুরী যিনি ঢাকার শান্তিনগর এলাকায় বসবাস করেন এবং একটি FMCG কোম্পানিতে সেলস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে তার ৫ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং ব্যাংক একাউন্টে ১২১,৪৫০ টাকা ছিল। এছাড়া তার একটি টয়োটা অ্যাক্সিও (Toyota Axio) ব্র্যান্ডের ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে যার ইঞ্জিন ক্ষমতা ১৫০০ সিসির নিচে। ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে তার আর কোনো সম্পদ নেই। তাহলে, তাকে কি পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল করতে হবে?
সমাধান ২:
মোট সম্পদের মূল্যায়নে দেখা যায় যে মিস. তানিয়া চৌধুরীর পরিসম্পদ ৫০ লক্ষ টাকার বেশি নয়। যদি আমরা পরিসম্পদ এর পরিমাণ বিবেচনা করি তাহলে মিস. তানিয়া চৌধুরীকে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল করতে হবে না। তবে যেহেতু তিনি একটি মোটরগাড়ির মালিক তাই তার সম্পদের মূল্য যাই হোক না কেন তাকে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B জমা দিতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে যদিও মিস. তানিয়া চৌধুরীর মোট পরিসম্পদ ৫০ লক্ষ টাকার কম তবুও মোটরগাড়ির মালিক হওয়ার কারণে তাকে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল করতে হবে ।
(গ) করদাতা যদি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করেন
যদি কোনো ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষে সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে গৃহ সম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করেন তবে তাকে আবশ্যিকভাবে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল করতে হবে। অর্থাৎ পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল করার বাধ্যবাধকতা একটি নির্দিষ্ট শর্ত দ্বারা প্রভাবিত হয়। উল্লেখ যে, এই শর্তটি স্বাধীন এবং ব্যক্তির মোট সম্পদের মূল্যের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নাই।
সহজ কথায় যদি কোনো ব্যক্তি সিটি কর্পোরেশন এলাকার অবস্থিত আবাসিক সম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করেন তবে তাকে আবশ্যিকভাবে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B জমা দিতে হবে।
উদাহরণ ৩:
মি. শামিন হোসেন ঢাকার বাড্ডা এলাকায় বসবাস করেন। ২২ মে ২০২৪ তারিখে তিনি ১৫০০ বর্গফুটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় করেন। ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে তার নিম্নলিখিত সম্পদগুলো ছিল:
পরিসম্পদ | পরিমাণ |
বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র | ৮০০,০০০ |
ব্যাংক ব্যালেন্স: | |
ঢাকা ব্যাংক | ১১৩,০৫০ |
ডাচ বাংলা ব্যাংক | ৩৪২,৮০০ |
এবি ব্যাংক | ১২৭,৩০০ |
হাতে নগদ | ৫০২,০০০ |
প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যালেন্স | ৬২০,৩৫২ |
মি. শামিন হোসেন কে কি পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল করতে হবে?
সমাধান ৩:
যেহেতু মি. হোসেন সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে একটি অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করেছেন তাই তাকে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B জমা দিতে হবে।
(ঘ) করদাতা যদি আয়বর্ষের কোনো সময়ে বিদেশে কোনো পরিসম্পদের মালিক হন
যদি একজন ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতা আয়বর্ষের কোনো সময়ে বাংলাদেশের বাইরে কোনো কোনো পরিসম্পদের মালিক হন তবে করদাতাকে আবশ্যিকভাবে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B জমা দিতে হবে। অর্থাৎ যদি কোনো ব্যক্তির বিদেশে কোনো সম্পদ থাকে (সম্পদের মূল্য যাই হোক না কেন ) তবে তাকে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল করতে হবে।
(ঙ) করদাতা যদি কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হন
যদি কোনো ব্যক্তি কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হন তবে তাকে আবশ্যিকভাবে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল করতে হবে। অর্থাৎ যদি কোনো ব্যক্তি কোন কোম্পানিতে শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হিসেবে কাজ করেন তবে ঐ ব্যক্তির আয় বা পরিসম্পদের মূল্য যাই হোক না কেন তাকে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B জমা দিতে হবে।
উদাহরণ ৪:
মি. মাহবুব করিম ABC লিমিটেড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ABC লিমিটেডে কোম্পানির ২০,০০০ শেয়ারের মালিক এবং তিনি কোম্পানিতে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে তার সম্পদ ও দায়ের পরিমাণ ছিল নিম্নরূপ:
পরিসম্পদ | পরিমাণ |
বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র | ১,২০০,০০০ |
ABC লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডিং | ২০০,০০০ |
ব্যাংক ব্যালেন্স: | |
ঢাকা ব্যাংক | ২১৩,০৫০ |
ডাচ বাংলা ব্যাংক | ৩৬২,৮০০ |
এবি ব্যাংক | ১২৮,৩০০ |
হাতে নগদ | ১২২,০০০ |
মি. মাহবুব করিম কে কি পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল করতে হবে?
সমাধান ৪:
মি. করিমের সম্পদ ও দায়ের পরিমাণ মূল্যায়ন করে দেখা যায় যে পরিসম্পদের মূল্যের ভিত্তিতে তাকে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী (আইটি ১০বি) জমা দিতে হবে না কারণ তার সম্পদের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকার কম। তবে লিমিটেড কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকার কারণে মি. করিমকে বাধ্যতামূলকভাবে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল করতে হবে।
(চ) করদাতা যদি সরকারি কর্মচারী হন
সকল সরকারি কর্মচারীদের আবশ্যিকভাবে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী (আইটি ১০বি) দাখিল করতে হবে। একজন সরকারি চাকুরীজীবি তিনি যে পদেই চাকুরি করেন না কেন তাকে বাধ্যতামূলকভাবে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল করতে হবে। অর্থাৎ পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী (আইটি ১০বি) দাখিল প্রতিটি সরকারি কর্মচারীর জন্য সার্বজনীনভাবে প্রযোজ্য, তাদের অবস্থান বা অন্যান্য আর্থিক বিষয় এখানে বিবেচ্য নয়।
উদাহরণ ৫:
মিস. রিমা রায় একজন সরকারি চাকরিজীবী। তিনি বরিশালের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে তার নিম্নলিখিত সম্পদ ছিল:
পরিসম্পদ | পরিমাণ |
পোস্ট অফিস সেভিংস অ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স | ২০০,০০০ |
সোনালী ব্যাংকে FDR | ৫০০,০০০ |
ব্যাংক ব্যালেন্স: | |
সোনালী ব্যাংক | ১৩,০৫০ |
ডাচ বাংলা ব্যাংক | ৬২,৮০০ |
এবি ব্যাংক | ১২৮,৩০০ |
মিস. রিমা রায় কে কি পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল করতে হবে?
সমাধান ৫:
একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে মিস রিমা রায়কে বাধ্যতামূলকভাবে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B জমা দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে, মিস রিমা রায় এর সম্পদের সীমা বিবেচ্য নয়। এটি সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের জন্য পদবী বা গ্রেড নির্বিশেষে সমানভাবে প্রযোজ্য।
স্বেচ্ছায় পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিল
যদি কোনো ব্যক্তি আইনগতভাবে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B দাখিলে বাধ্য না হন তবুও তিনি চাইলে স্বেচ্ছায় পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B জমা দিতে পারেন। অর্থাৎ যদি কোন করদাতা নির্ধারিত শর্তাবলীর অধীনে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী জমা দেওয়ার জন্য বাধ্য না হন তবুও তিনি ঐ বিবরণী স্বেচ্ছায় জমা দিতে পারেন।
পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B এর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট
এ পর্যন্ত আমরা আলোচনা করেছি যে কাকে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী (আইটি ১০বি) জমা দিতে হবে। এখন আমরা কিছু অন্যান্য আইনগত বিধান বিবেচনা করবো যা পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B জমা দেওয়ার সময় বিবেচনা করতে হবে।
- “নিবাসী বাংলাদেশী (Resident Bangladeshi)” করদাতা এর ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী সম্পদ এবং দায় পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী (আইটি ১০বি) তে উল্লেখ করতে হবে। একজন নিবাসী বাংলাদেশি স্বাভাবিক করদাতাকে তাহার রিটার্নে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থিত সকল প্রকার পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী দাখিল করতে হবে। এর অর্থ হল সকল সম্পদ এবং দায় তা বিশ্বের যেখানেই থাকুক না কেন (বাংলাদেশের মধ্যে বা বাংলাদেশের বাইরে ) সেগুলোকে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B তে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
- “অনিবাসী বাংলাদেশী (Non-resident Bangladeshi) “ করদাতা এর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত সম্পদ এবং দায় এর বিস্তারিত বিবরণীতে উল্লেখ করতে হবে। অর্থাৎ একজন অনিবাসী বাংলাদেশী করদাতার ক্ষেত্রে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B তে শুধুমাত্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত সম্পদ এবং দায় অন্তর্ভুক্ত হবে।
- বিদেশি স্বাভাবিক করদাতা যিনি বাংলাদেশি নহেন (Foreigner) তাহার রিটার্নে বাংলাদেশে অবস্থিত সকল প্রকার পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী দাখিল করিবেন। অর্থাৎ তাদের জন্য এই বিবরণীতে কেবল বাংলাদেশে অবস্থিত সম্পদ ও দায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
করদাতার পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণীতে তার স্বামী বা স্ত্রী এবং নাবালক সন্তানের সম্পদ ও দায় অন্তর্ভুক্ত হবে
যেসব ক্ষেত্রে কোন করদাতার অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান এবং spouse এর Taxpayer Identification Number (TIN) সার্টিফিকেট নেই সেইসব ক্ষেত্রে করদাতার পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণীতে তার অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান এবং spouse এর সকল সম্পদ ও দায় অন্তর্ভুক্ত হবে।
উদাহরণ ৬:
জনাব আতিক আহমেদ একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার স্ত্রী মিসেস শীলা আহমেদ একজন গৃহিণী এবং সম্পূর্ণভাবে তার উপর নির্ভরশীল। মিসেস শীলা আহমেদের কোনো টিআইএন সার্টিফিকেট নেই এবং তিনি তার আয়কর রিটার্ন জমা দেন না। ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত বছরে তিনি তার স্বামীর থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকে ৩,০০,০০০ টাকা একটি এফডিআরে বিনিয়োগ করেন।
সমাধান ৬:
যেহেতু মিসেস শীলা আহমেদের কোনো টিআইএন সার্টিফিকেট নেই এবং তিনি তার আয়কর রিটার্ন জমা দেন না সেহেতু জনাব আতিক আহমেদের পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী (আইটি ১০বি) তে তার স্ত্রী মিসেস শীলা আহমেদ এর বিনিয়োগকৃত এফডিআর ৩,০০,০০০ উল্লেখ করতে হবে।
উপকর কমিশনার এর লিখিত নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদ ও দায় বিবরণী দাখিল
আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা ১৬৭(৭) অনুযায়ী, উপকর কমিশনার কোনো ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B জমা দেওয়ার জন্য লিখিত নোটিশ প্রদান করতে পারেন। যদি এ ধরনের নোটিশ প্রদান করা হয়, তাহলে কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই নোটিশ অনুযায়ী ফর্মটি জমা দিতে হবে।
উপসংহার
করদাতার সম্পদের পরিমাণ ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকার অধিক হলে বা করদাতা মোটরযানের মালিক হলে বা করদাতা সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে গৃহ সম্পত্তি/ অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করলে বা করদাতা বিদেশে কোনো পরিসম্পদের মালিক হলে বা করদাতা কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হলে বা করদাতা গণকর্মচারী (সরকারি কর্মচারী) হলে তাকে আবশ্যিকভাবে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী দাখিল করতে হবে। তবে কেউ চাইলে স্বেচ্ছায় পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী (আইটি ১০বি) জমা দিতে পারেন।
পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী-IT 10B – রেফারেন্স/ উৎস:
Share on –